জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশের কৃষি, কৃষক, পরিবেশ এবং মানুষের শতভাগ স্বাস্থ্য বান্ধব হলেই কেবল জীব প্রযুক্তির ফসল উন্মুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন সংবাদকর্মীরা।
তারা বলেছেন, শুধু উৎপাদনের দিকে নজর দিলে হবে না। দেশের কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে কতটুকু কাজে লাগছে, রপ্তানীযোগ্য হচ্ছে কিনা এবং তা শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত নিশ্চিত হওয়ার পরই জীব প্রযুক্তির ফসল উন্মুক্ত করতে হবে।
রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) কৃষি জীবপ্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদ পরিবেশনে কৃষি সাংবাদিকদের দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক দুইদিনব্যাপি এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার প্রথম দিনে উন্মুক্ত আলোচনায় দেশের গণমাধ্যমকর্মীরা এসব কথা বলেন।
কর্মশালায় গবেষণার সঠিক পরিসংখ্যান ও তথ্য তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা বলেন, ভাসা ভাসা তথ্য দিলে হবে না, পুরো বিষয়টি তথ্যবহুলভাবে তুলে ধরতে হবে। জীবপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে সঠিক ফসলও নির্বাচন করতে হবে।
শুরুতে জীবপ্রযুক্তির ফসল উন্মুক্তের ক্ষেত্রে খাদ্যপণ্য বেছা নেয়াও ভুল ছিলো বলে উল্লেখ করেন তারা। এছাড়া সংবাদকর্মীদের ভুল না বুঝে সঠিক তথ্য উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়। উন্মুক্ত আলোচনায় বিজ্ঞানীরা কৃষি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, বিজ্ঞানের সুনিপুণ কৌশলকে কাজে লাগিয়ে ফসলের বীজ ও উদ্ভিদের অভ্যন্তরীণ কাঠামোতে পরিবর্তন ঘটিয়ে মানুষের প্রয়োজন মিটানোর প্রচেষ্টা সেটাই জীবপ্রযুক্তি। বৈজ্ঞানিক মহলে যা “বায়োটেকনোলজি” হিসেবেই অধিক পরিচিত। ভবিষ্যতের কৃষির উৎকর্ষতা এই জীবপ্রযুক্তিকে ঘিরেই আবর্তিত হবে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর কারিগরী সহায়তায় আর্ন্তজাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ যৌথভাবে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়, কৃষি সাংবাদিকদের এ বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে জনগনের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা এবং সঠিক তথ্য নির্ভর কৃষি সংবাদ প্রচারে সহায়তা করা।
কর্মশালার কারিগরী সেশনে গোল্ডেন রাইস, বিটি বেগুন ও বিটি তুলাসহ বিভিন্ন জীবপ্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবিত ফসল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা।
কারিগরী সেশনে বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্ণেল বিশ^বিদ্যালয়ের এলায়েন্স ফর সায়েন্স এর প্রশিক্ষক মিস প্যাটরিশিয়া নানতেনজা ও দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ।
কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, একুশ শতকের কৃষি মানেই প্রযুক্তির ছোয়া। বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন ফসল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছেন। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে এখন ফসল বোনা থেকে খাবার টেবিল পর্যন্ত সামগ্রিক প্রক্রিয়া সহজসাধ্য হয়ে উঠেছে।
বিজ্ঞানীদের মতে নিকট ভবিষ্যতে মানুষের চাহিদামতো নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার যোগান দিতে জীবপ্রযুক্তির ব্যবহার হয়ে উঠবে অন্যতম উপায়। তবে এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগুলো নিয়ে সঠিক তথ্যের অভাবে জনমনে কিছুটা বিভ্রান্তি রয়েছে।
কারণ এ সর্ম্পকে মৌলিক জ্ঞান এর অভাবে সাধারন মানুষের পাশাপাশি অনেক বিজ্ঞানমনস্ক মানুষও এই প্রযুক্তি নিয়ে বিভ্রান্ত হন। অথচ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে হরহামেশাই জীবপ্রযুক্তি উদ্ভাবিত খাবার গ্রহন ও পণ্য ব্যবহার করছি।
বিজ্ঞানীদের সাথে সাংবাদিকদের সেতু বন্ধনের জন্য এই ধরনের কর্মশালা আয়োজন একটি অনন্য উদ্যোগ বলে মনে করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক ড. মো: শাহজাহান কবীর।
কর্মশালার শেষ পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিভ্রান্তি দূরীকরণে সাংবাদিকরা সর্বদা তৎপর। আশা করি এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
ব্রি’র মহাপরিচালক বলেন, আমরা প্রতিবছর পাঁচ থেকে ছয় মাস পরপর শিশুদের ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়াই। কিন্তু শতভাগ শিশুকে তো ক্যাপসুল খাওয়ানো সম্ভব হয় না।
জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাত থাকলেও জিংকের মাত্রা এমন পর্যায়ে থাকে যে ওই চাল পলিসিং করলে আর জিংক থাকে না। তাই চালের ভেতরে যাতে জিংক প্রবেশ করানো যায় সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। আর এসব কারণেই গোল্ডেন রাইসের প্রয়োজন রয়েছে।
ইরি বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. হোমনাথ ভান্ডারীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল কনসালটেন্ট ইরি ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস ও ইরি বংলাদেশ অফিসের সিনিয়র ম্যানেজার ড. সৈয়দ মো: ইব্রাহীম ও ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ এর সিইও মো: আরিফ হোসেন।
আজ সোমবার ২৫ ফেব্রুয়ারি অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের নিয়ে ব্রি ও বারির গবেষণা মাঠ ও ল্যাব পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।