বাংলাদেশে টেকসই খাদ্য সুরক্ষায় আধুনিক কৃষিতে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও ইসলাম
Published:
23 June, 2021
Share:
বাংলাদেশে টেকসই খাদ্য সুরক্ষায় আধুনিক কৃষিতে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও ইসলাম

কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং কৃষিতে জিন প্রকৌশল প্রয়োগ ও সুবিধার উপর জোর দিয়ে কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কিত তথ্য সম্পর্কে ধর্মীয় নেতাদের জ্ঞান এবং দক্ষতা উন্নয়ন করার লক্ষে ঢাকার ইনস্টিটিউট অফ আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ (আইএবি), আগারগাঁও, ভবনে, ২২ ও ২৩ জুন, ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ (এফএফবি) দুই দিনব্যাপী এক প্রশিক্ষণ ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি (আইটিএ) – এর তালিকাভুক্ত এক শতাধিক ইমাম এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন।  

এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইমামগণ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, উন্নয়ন কর্মী এবং বিশেষজ্ঞগণের সাথে কৃষি ও জৈব-প্রযুক্তি ব্যবহার, সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং আধুনিক উদ্ভাবন নিয়ে কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। ফলস্বরূপ সঠিক তথ্য প্রচারের মাধ্যমে, ইমামগণ সাধারণ জনগণের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য ছিলো খাদ্য সুরক্ষা অর্জনে, কৃষিতে জৈবপ্রযুক্তির সম্ভাবনা এবং অগ্রগতির বিষয়ে পুষ্টি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য চাহিদা নিশ্চিতকরনে যেন ইমামগণ দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের নিকট যাতে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে পারে । প্রশিক্ষণে প্রাসঙ্গিক তথ্য ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিজ্ঞান ভিত্তিক সাধারন বিষয় এবং জনসাধারনের মধ্যে প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতার কিভাবে করা যেতে পারে, সে বিষয় নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে।

ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশের সিইও ও নির্বাহী পরিচালক মোঃ আরিফ হোসেন তার বক্তব্যে বলেন “এফএফবি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, সাধারণ মানুষকে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের জন্য কৃষিতে জৈবপ্রযুক্তির ব্যবহার ও আধুনিক কৃষি উদ্ভাবনের সুবিধা সাধরন মানুষকে বুঝতে সহায়তা করার জন্য ইমামগণ শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য প্রভাবক হিসবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।"

“আজ আমি কৃষিতে বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছি যা আমরা প্রায়শই আমাদের খুতবায় বলতে পারি বা আলোচনা করতে পারি। বিজ্ঞানীরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন যে ফসল উদ্ভাবন করেছে তার সুবিধাগুলো সম্পর্কে আমি আমার এলাকার কৃষকদের পরামর্শ দিতে পারবো।”- বলেছিলেন মোঃ আশরাফ আলী, ইমাম, যাত্রাবাড়ী পুলিশ স্টেশন মসজিদ।  মোঃ আতিকুর রহমান, ইমাম, গণ ভবন  মসজিদ  বলেন, “বায়োটেকনোলজির মতো আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণের সময় এসেছে বাংলাদেশের। আমাদের ধর্মে জিএমও ফসল উৎপাদন এবং খাওয়ার উপর কোনও বিধিনিষেধ নেই কারণ এটি নিরাপদ, হালাল এবং এমনকি স্বাস্থ্যকর। এছাড়া ইসলামে বলা আছে, যা কিছু মানুষের জন্য কল্যাণকর, সেটি ইসলাম হালাল করেছেন। “

“ইসলাম ধর্ম সর্বদা মানবজাতির পক্ষে মঙ্গলজনক বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনকে সমর্থন করে ”, বলেন ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি (আইটিএ) এর প্রশিক্ষক জনাব মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, পরিচালক, আইসিটি অ্যান্ড প্লানিং ।   

শের-এ-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ডঃ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ধর্মীয় নেতাদের বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের প্রচারণার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “কৃষির উদ্ভাবন  গ্রহণ না করলে মানুষের অস্তিত্ব টিকেয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। কৃষি-জৈবপ্রযুক্তি এবং জলবায়ু স্মার্ট কৃষি গ্রহণের  মাধ্যমে চাহিদা মাফিক  উৎপাদন নিশ্চিত করা সম্ভব, যা এর বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য অনেক প্রয়োজন।  

প্রশিক্ষণে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) – এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
ড একেএম কামারুজ্জামান বলেন, “ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং পরিবেশ বিপর্যয় এর মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনে যে ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে, জৈবপ্রযুক্তির উৎকর্ষতা এবং এর  যথাযথ ব্যাবহার এর মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবিলায় করা সম্ভব এবং সয়াহক ভূমিকা পালন করবে।"

ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ (এফএফবি) বাংলাদেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনে জিন প্রকৌশল সহ আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিয়োজিত একটি প্রতিষ্ঠান। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এর অর্থায়নে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কর্নেল অ্যালায়েন্স ফর সাইন্স’ এর পৃষ্ঠপোষকতায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।