কৃষি জীবপ্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদ পরিবেশনে কৃষি সাংবাদিকদের দক্ষতা উন্নয়নে দুই দিনব্যাপী এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারের লা ভিঞ্চি হোটেলে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কারিগরি সহায়তায় আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) ও ফার্মি ফিউচার বাংলাদেশ যৌথভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করে। ইরি বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. হোমনাথ ভান্ডারীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইরির ন্যাশনাল কনসালটেন্ট ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস ও ইরির বংলাদেশ অফিসের সিনিয়র ম্যানেজার ড. সৈয়দ মো. ইব্রাহীম ও ফার্মি ফিউচার বাংলাদেশের সিইও মো. আরিফ হোসেন।
কর্মশালার কারিগরী সেশনে গোল্ডেন রাইস, বিটি বেগুন ও বিটি তুলাসহ বিভিন্ন জীবপ্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবিত ফসল সম্পর্কে উপস্থাপনা করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও তুলা উন্নয়ন বোর্ডেও সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা। পরে বিজ্ঞানীরা কৃষি সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। কর্মশালার কারিগরী সেশনে বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এলায়েন্স ফর সায়েন্সের প্রশিক্ষক মিস প্যাটরিশিয়ানানতেনজা ও দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ।
কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, একুশ শতকের কৃষি মানেই প্রযুক্তির ছোয়া। বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন ফসল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছেন। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে এখন ফসল বোনা থেকে খাবার টেবিল পর্যন্ত সামগ্রিক প্রক্রিয়া সহজসাধ্য হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানের সুনিপুণ কৌশলকে কাজে লাগিয়ে ফসলের বীজ ও উদ্ভিদেও অভ্যন্তরীণ কাঠামোতে পরিবর্তন ঘটিয়ে মানুষের প্রয়োজন মিটানোর প্রচেষ্টা সেটাই জীবপ্রযুক্তি। বৈজ্ঞানিক মহলে যা “বায়োটেকনোলজি” হিসেবেই অধিক পরিচিত। ভবিষ্যতের কৃষির উৎকর্ষতা এই জীব প্রযুক্তিকে ঘিরেই আবর্তিত হবে।
বিজ্ঞানীদের মতে নিকট ভবিষ্যতে মানুষের চাহিদামতো নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার যোগান দিতে জীবপ্রযুক্তির ব্যবহার হয়ে উঠবে অন্যতম উপায়। তবে এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগুলো নিয়ে সঠিক তথ্যেও অভাবে জনমনে কিছুটা বিভ্রান্তি রয়েছে। কারণ এ সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞানের অভাবে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অনেক বিজ্ঞানমনস্ক মানুষও এই প্রযুক্তি নিয়ে বিভ্রান্ত হন। অথচ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে হরহামেশাই আমরা জীবপ্রযুক্তি উদ্ভাবিত খাবার গ্রহণ ও পণ্য ব্যবহার করছি। এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্দেশ্য কৃষি সাংবাদিকদের এ বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা এবং সঠিক তথ্য নির্ভর কৃষি সংবাদ প্রচারে সহায়তা করা।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, বিজ্ঞানীদের সঙ্গে সাংবাদিকদের সেতুবন্ধনের জন্য এই ধরনের কর্মশালা আয়োজন একটি অনন্য উদ্যোগ। বিজ্ঞানীরা প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিভ্রান্তি দূরীকরণে সাংবাদিকরা সর্বদা তৎপর। আশা করি এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। দুই দিনে এই কর্মশালার আজ শেষ দিনে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের নিয়ে ব্রি ও বারির গবেষণা মাঠ ও ল্যাব পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।