খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্য (এসজিডি) অর্জনে এবং কৃষি উদ্ভাবনকে কার্যকরভাবে ব্যবহারে বিজ্ঞানী, সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদসহ সকলের সমন্বিত কাজে সফলতা আসবে। প্রযুক্তি বিজ্ঞানের সঙ্গে কৃষির মেলবন্ধনে এ সফলতা আনা সম্ভব বলে জানিয়েছে ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ (এফএফবি)।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) ‘কৃষি বিষয়ক সংবাদ পরিবেশনে সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী এক কর্মশালায় বক্তারা এসব মন্তব্য করেন।
ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশের (এফএফবি) আয়োজনে অনলাইন মাধ্যম জুমে রংপুর বিভাগের গণমাধ্যমকর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কৃষি ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যেমন কৃষিতে জীবপ্রযুক্তি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তন কি প্রভাব রাখে সে বিষয় মতবিনিময় করা হয়। দুইদিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানের বিভিন্ন সেশনে জীবপ্রযুক্তি, বায়োসেফটি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, আধুনিক কৃষি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়।
এ সময় দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমের বিশিষ্ট সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞগন এই প্রশিক্ষন কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন।
যারা বিভিন্ন সেশনে প্যানেলিস্ট হিসাবে উপস্থিত থেকে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে কৃষিতে জীবপ্রযুক্তি, খাদ্য নিরাপত্তা, জিনোম সম্পাদনা, বিজ্ঞান-ভিত্তিক উদ্ভাবন এবং কৃষিশিক্ষার অন্যান্য দিক সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করেন। প্রশিক্ষণটি কৃষিতে জীবপ্রযুক্তির ব্যবহার, সমস্যা ও সম্ভাবনা বিষয়ে প্রথিতযশা সাংবাদিক ও বিজ্ঞানীদের সঙ্গে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মতবিনিময় করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। ফলে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের একটি আন্তঃসম্পর্ক তৈরি হয়েছে, যার ফলস্বরূপ আলোচ্য বিষয়ে অংশগ্রহণকারী সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে বলে উপস্থিত সবাই আশা প্রকাশ করেন।
ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশের সিইও মো. আরিফ হোসেন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আধুনিক কৃষি উদ্ভাবনের সুফল সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
মো. আরিফ হোসেন বলেন, “গণমাধ্যম, গণযোগাযোগ কর্মী, এবং সাংবাদিক এই সবার মধ্যে একটি সেতু বন্ধন তৈরি করা যেতে পারে, এর মাধ্যমে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যাবহার এবং প্রসার নিশ্চিত করা সম্ভব। কৃষিতে আধুনিকায়নের ফলে, বাংলাদেশে অনেক তরুণ-উদ্যমী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাজার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে, বিপণন ব্যবস্থা, এবং উৎপাদক ও বিক্রেতাদের মধ্যে তথ্য-যোগাযোগের ঘাটতির ফলে এই সকল ফসলের বাণিজ্যিকীকরণের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে না; এবং কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। তাই কৃষিকে একটি লাভজনক উদ্যোগ হিসেবে তৈরি করতে এই সমস্যার সমাধান দরকার। এর ফলে কৃষিতে তরুণ উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, “বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য আমাদের এমন প্রযুক্তি দরকার যা আমাদের কৃষকদের জন্য আরও বেশি ফলন এবং ভাল লাভের সুযোগ দেবে; সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টি নিরাপত্তাও নিসছত করবে। আধুনিক জীবপ্রজুক্তি ফসলকে তার পুষ্টির মান অক্ষুণ্ন রেখে মানুষের পুষ্টিমান উন্নয়ন করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।”
ড. আহমেদ সালাহউদ্দিন যিনি আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পুষ্টিকর ধান গবেষণার একজন সিনিয়র সহযোগী বিজ্ঞানী হিসাবে কাজ করছেন, তিনি সংবাদ পরিবেশনের আগে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশীজন, বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, “আমাদের উচিত তথ্য আদান-প্রদান এবং সক্ষমতা- বৃদ্ধি কার্যক্রমে আরো বেশি গুরুত্ব দিয়ে এরকম প্রোগ্রাম বেশি বেশি করা।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম, বাংলাদেশে কৃষি-জীবপ্রযুক্তি/জিন সম্পাদনার প্রয়োগ ও উপযোগিতা নিয়ে বক্তৃতা করেন। তিনি তার বক্তৃতায় বলেন, “কৃষি উদ্ভাবনের জন্য জীবপ্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যা বাংলাদেশের জন্য পর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ (এফএফবি) সামাজিক যোগাযোগ ও সহযোগিতা উন্নয়নে নিবেদিত একটি প্রতিষ্ঠান। যার মূল লক্ষ্য বাংলাদেশে টেকসই খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে কৃষিখাতে বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহার সহজলভ্য করা। যার মধ্যে শস্য উৎপাদনে জীবপ্রযুক্তির ব্যবহার অন্যতম।
বাংলাদেশ ভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষকতায়, যুক্তরাষ্টের অ্যালায়েন্স ফর সায়েন্স, কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়, মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। এফএফবি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের কৃষিখাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত করছে, যারা সমন্বিতভাবে খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশের স্থিতিশীলতা ও জীবনমান উন্নয়নে বিজ্ঞানের উদ্ভাবনকে কাজে লাগাতে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এদিকে ২৫-২৬ জানুয়ারি দুইদিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ ও মতবিনিময় সভায় রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার সংবাদমাধ্যমের ২৫ জনেরও বেশি সাংবাদিক এতে অংশ নেন।