টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ও খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে কৃষি উদ্ভাবনকে কার্যকরভাবে ব্যবহারে প্রান্তিক কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করতে সংবাদ লিখন ও প্রকাশে মিডিয়া কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আজ শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০) রাজশাহীতে ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ (এফএফবি) দিনব্যাপী এক প্রশিক্ষণ ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের সাংবাদিকদের জন্য আয়োজিত "কৃষি বিষয়ক সংবাদ পরিবেশনে সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি" শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যেমন- কৃষিতে জীবপ্রযুক্তি এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও তার প্রভাব সম্পর্কিত বিষয়ে ---জন সাংবাদিক কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক সংবাদপত্র, টেলিভিশন, ম্যাগাজিনের সাংবাদিকবৃন্দ দক্ষতা বৃদ্ধির এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহন করেন।
এই প্রশিক্ষণটির মূল লক্ষ্য ছিলো কৃষিতে জীবপ্রযুক্তির ব্যবহার এবং এর তথ্য ও যোগাযোগ সম্পর্কিত বিষয় সম্পর্কে সাংবাদিকদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষিত করা। দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমের বিশিষ্ট সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞগন কর্মশালায় উপস্থাপনা প্রদান করেন। এই প্রশিক্ষণ কৃষিতে জীবপ্রযুক্তির ব্যবহার, সমস্যা ও সম্ভাবনা বিষয়ে প্রথিতযশা সাংবাদিক ও বিজ্ঞানীদের সঙ্গে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মতবিনিময় করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। ফলে অংশগ্রহনকারীদের সাথে বিশেষজ্ঞদের একটি আন্তঃসম্পর্ক তৈরি হয়েছে, যার ফলস্বরূপ আলোচ্য বিষয়ে জনসাধারনের সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে বলে উপস্থিত সবাই আশা প্রকাশ করেন।
কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, একুশ শতকের কৃষি মানেই প্রযুক্তির ছোয়া। বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন ফসল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছেন। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে এখন ফসল বোনা থেকে খাবার টেবিল পর্যন্ত -সামগ্রিক প্রক্রিয়াকে সহজসাধ্য করে তুলেছে। বিজ্ঞানের সুনিপুণ কৌশলকে কাজে লাগিয়ে ফসলের বীজ ও উদ্ভিদেও অভ্যন্তরীণ কাঠামোতে পরিবর্তন ঘটিয়ে মানুষের প্রয়োজন মেটানোর প্রচেষ্টাও অব্যাহত আছে। মুলত এই প্রক্রিয়াকেই আমরা জীবপ্রযুক্তি বলে থাকি । বৈজ্ঞানিক মহলে যা “বায়োটেকনোলজি” হিসেবেই অধিক পরিচিত। ভবিষ্যতের কৃষির উৎকর্ষতা এই জীবপ্রযুক্তি কে ঘিরেই আবর্তিত হবে।
বিজ্ঞানীদের মতে নিকট ভবিষ্যতে মানুষের চাহিদামতো নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার যোগান দিতে জৈবপ্রযুক্তির ব্যবহার হয়ে উঠবে অন্যতম উপায়। তবে এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগুলো নিয়ে সঠিক তথ্যের অভাবে জনমনে কিছুটা বিভ্রান্তি রয়েছে। কারণ এ সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞানের অভাবে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অনেক বিজ্ঞানমনস্ক মানুষও এই প্রযুক্তি নিয়ে বিভ্রান্ত হন। অথচ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে হরহামেশাই আমরা জীবপ্রযুক্তি উদ্ভাবিত খাবার গ্রহণ ও পণ্য ব্যবহার করছি।
বাংলাদেশের কৃষকরা ইতোমধ্যে একটি জিন পরিবর্তিত ফসল, কীট প্রতিরোধী ‘বিটি বেগুন’ গ্রহণ করেছে । বিটি বেগুন চাষের ফলে কীটনাশক ব্যবহারের মাত্রা প্রায় ৫১% কমেছে। ফলে বেগুন উৎপাদনের হার ও কৃষকদের আয় আগের তুলনায় প্রায় ছয়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মোঃ আরিফ হোসেন বলেন “কৃষি জীবপ্রযুক্তিকে সফলভাবে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে সামাজিকভাবে এর গ্রহণযোগ্যতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার ফলে প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং বাস্তবায়নের পাশাপাশি কৃষক ও গ্রাহকরা এর থেকে কীভাবে উপকৃত হতে পারে তা নির্ভর করে সঠিক তথ্য প্রকাশ করার উপর ।”
মোঃ আরিফ হোসেন আরও বলেন “আমরা চাই বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ খাদ্য নিরাপত্তা ও জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কৃষিক্ষেত্রের উদ্ভাবনকে কাজে লাগিয়ে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত পৃথিবী গড়তে সক্রিয় ভুমিকা পালন করবে।
কর্মশালায় রাজশাহীর বিশ্ববিদ্যালয়ের গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জনাব শাতিল সিরাজ তার মূল প্রবন্ধে বলেন, বিজ্ঞান বিষয়ক তথ্য প্রচারে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। সামাজিক সচেতনতা এবং নতুন নতুন প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য সঠিক সংবাদ প্রকাশ আমাদের টেকসই ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে ইতিবাচক সুফল বয়ে আনবে। তিনি বাংলাদেশর অন্যান্য জেলায়ও এরকম আরও প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
পরে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যক্রম ও ল্যাব পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।
ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ (এফএফবি) বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এর অর্থায়নে গঠিত একটি প্রতিষ্ঠান যার মূল লক্ষ্য বাংলাদেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনে জীবপ্রযুক্তিসহ আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি বিষয়ক সচেতনতা বাড়ানো। যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কর্নেল অ্যালায়েন্স ফর সাইন্স’ এর পৃষ্ঠপোষকতায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ।