কম জমিতে বেশি ফলন, বিটি বেগুন চাষে ঝুঁকছেন কৃষক
Published:
22 May, 2022
Share:
কম জমিতে বেশি ফলন, বিটি বেগুন চাষে ঝুঁকছেন কৃষক

বিটি বেগুনের চাষ বাড়ছে কয়রায়। অল্প জমিতে বেশি ফলন হওয়ায় ও কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন না পড়ায় কৃষকেরা এ বেগুন চাষে ঝুঁকছেন। বারি বিটি-৪ জাতের এই বেগুনের বাজার দরও বেশ চড়া। এ কারণে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা।

কয়রা উপজেলার ৩ নম্বর কয়রা গ্রামের প্রতি বাড়িতে হচ্ছে বিটি বেগুনের চাষ। কৃষকদের এ বেগুন চাষে সার্বিক সহযোগিতা করছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, কয়রা অফিস।

জানা গেছে, প্রতি বছর সাধারণ বেগুন চাষের সময় পোকার আক্রমণে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বেগুন মাঠেই নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য মোটা অংকের অর্থ ব্যয় হয় কীটনাশকের পেছনে। তাই খরচ পুষিয়ে নিতে বিটি বেগুন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষক।

কয়রা উপজেলার ৩ নম্বর কয়রা গ্রামের আবুল হাসান বলেন, তিনি নিজ জমিতে দেশি জাতের বেগুনের আবাদ করতেন। এগুলোতে পোকা মাকড় ও পাখির আক্রমণ থাকে, অন্যদিকে ওজন কম। কীটনাশকে খরচ হতো অনেক টাকা। খরচ বাদ দিয়ে লাভ করা কঠিন হয়ে পড়ত। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফলন না পেয়ে অনেকটা হতাশ ছিলেন তিনি। হতাশ এই কৃষক অবশেষে কয়রার সরেজমিন গবেষণা বিভাগের কর্মকর্তার কাছে শরণাপন্ন হন।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরামর্শে বারি বিটি-৪ জাতের বেগুন চাষ করেছেন। তার ৩ বিঘা জমির ওপর পরীক্ষামূলকভাবে ৫ হাজার ৬০০ চারা রোপণ করেন। ২ মাস ধরে তিনি তার জমি থেকে বেগুন সংগ্রহ করছেন। তিনি বলেন, এ বছরে ৩ বিঘা জমিতে অন্তত ১৮ থেকে ২০ টন বেগুন পাওয়া যাবে। যা বিক্রি হবে সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা।

২ মাসে গড়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি হয়েছে। সামনে আরও ২ লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবে বলে আশা করছেন। অন্যান্য বেগুনের চেয়ে দেখতে সুন্দর ও মসৃণ হওয়ায় সবার আগে আমার বেগুন বিক্রি হয়ে যায়। দামও ভাল। তা ছাড়া বাইরের জেলার পাইকারি ব্যাপারীরা বেগুন কিনে নিয়ে যান। প্রতি কেজি বেগুন খুচরা বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা। পাইকারি বিক্রি করি ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

৩ নম্বর কয়রা গ্রামের আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি এ বছর দেড় বিঘা জমিতে বিটি বেগুন চাষ করেছি। বেগুনে পোকা না থাকায় সবার আগে বেগুন বিক্রি করে বেশি লাভবান হয়েছি। ৪ নম্বর কয়রা গ্রামের কৃষক গোপাল সরদার বলেন, এ বছর আমি ৩ বিঘা জমিতে বিটি বেগুন চাষ করেছি। এতে কোন বালাই নাশক স্প্রে করা লাগে না। এই বেগুন চাষে খরচ কম। লাভ বেশি। আমার দেখে এবার অনেকেই বিটি বেগুন চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

সরেজমিন মাঠ পরিদর্শনে গিয়ে বৈজ্ঞানিক সহকারী জাহিদ হাসানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ৩ নম্বর কয়রার প্রতিটি বাড়িতে বিটি বেগুন চাষ হয়েছে। তিনি বলেন, জৈব পদার্থ ও পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি এবং উঁচু জমিতে এ বেগুন সবচেয়ে বেশি ভাল হয়। জমিতে সেচ প্রয়োগের পরে মাটি মালচিং করতে হয়। এরপর সার প্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয়। এ জন্য আগাছা নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্রয়োজনীয় নিড়ানি ও মাটি মালচিং এবং বেড পদ্ধতিতে গাছ রোপণ করলে গাছের শিকড়ের বৃদ্ধি ভালো হয়।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল শাহাদত বলেন, বারি বিটি বেগুন-৪ চারা রোপণের ১২০ থেকে ২২০ দিন পর্যন্ত ফসল সংগ্রহ করা যায়। ভালো ব্যবস্থাপনায় হেক্টর প্রতি ৫০ থেকে ৬০ টন বেগুন উৎপাদন সম্ভব। কৃষকের এ সব পরামর্শ দিতে নিয়মিত মাঠে থাকে সরেজমিন গবেষণা বিভাগ